BanglaNews24.com news about Mount Kilimanjaro climb:
Monday, November 17, 2014
Friday, April 11, 2014
At Kilimanjaro Mountain (কিলিমানজারো পর্বতশৃঙ্গে)
http://www.thebengalitimes.com/details.php?pub_no=198&menu_id=1&val=11757
কাজী শাহরিয়ার রহমান
প্রায় দুই বছর আগের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু গত ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪। সানজোসে, ক্যালিফোরনিয়া বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে প্রথমে হিউস্টন। সেখান থেকে টারকিশ এয়ারলাইনসে ইস্তাম্বুল হয়ে তাঞ্জানিয়ার কিলিমানজারো বিমানবন্দর। ভ্রমণটা ভালোই ছিল। ৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে তিনটায় বিমানবন্দরে প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গাইড কোম্পানির গাড়িচালক। চালক নিয়ে গেল মশির হোটেল পানামাতে।
সকালে দেখা হলো আমাদের গাইড কোম্পানি কিলিমানজারো ব্রাদার্স অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চারের পরিচালক জর্জ এমটাকির সঙ্গে। তিনি জানালেন, আমাদের প্রধান গাইড হবে রোবার্ট এমটাবা। আর পাহাড়ে ওঠার অভিযান শুরু হবে ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে। দুপুরে আমার পর্বতারোহণ সঙ্গী মাউরিসিও টামায়ো এল ফ্লোরিডার মিয়ামি থেকে।
এই তিন দিনে যতটুকু সম্ভব জেটল্যাগ কাটানো আর শহরে ঘুরে বেড়ানো। আমরা একদিন একটা জলপ্রপাত দেখলাম এবং কিলিমানজারো মারাংগু গেট ঘুরে এলাম। এর মধ্যে গাইডরা আমাদের কিছু স্থানীয় ভাষা শেখাল। যেমন ‘পলে পলে’। বাংলায় এর অর্থ আস্তে আস্তে চলো। পরবর্তী কয়েক দিন এই পলে পলে শব্দ আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেল।
ফেব্রুয়ারি মাস শুষ্ক মৌসুম হলেও মাউনটেন-ফোরকাস্ট কম-এর মাধ্যমে জানা গেল পরবর্তী সাত দিন কিলিমানজারোতে বৃষ্টি, বরফ সবকিছুই থাকবে। এতে আমরা কিছুটা দমে গেলও আশা হারালাম না। মনকে সতেজ রাখতে মাউরি ও আমি একে অপরকে উৎসাহিত করলাম।
নির্ধারিত দিন সকালে জর্জ তাঁর দলবল নিয়ে হোটেলে এল। খাবারদাবারসহ গাড়িভর্তি বিভিন্ন রকমের প্রয়োজনীয় জিনিস; ক্লাইম্বিং গিয়ারস, টেন্ট, ফোল্ড চেয়ার-টেবিল ইত্যাদি। আমাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও গাড়িতে তোলা হলো। মশি শহর থেকে কিলিমানজারো পর্বতে ওঠার সবচেয়ে ভালো পথ হলো মাছামে গেট হয়ে। প্রায় ছয় হাজার ফুট উচ্চতায় মাছামে গেট। চূড়ায় উঠতে ছয় রাত আর সাত দিন লাগবে। মশি থেকে ৪৫ মিনিটের পথ মাছামে গেট। গাড়িতে ওখানে পৌঁছে আমি, আমার পর্বতারোহণ সঙ্গী মাউরি আর গাইডরা মিলে ঠিক করলাম প্রতিদিন আমাদের একেকটা নতুন সামিট বা সর্বোচ্চ শৃঙ্গ থাকবে আর কিলিমাঞ্জারোর সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠার জন্য এখনই আমরা বেশি মনোযোগ দেব না।
তাঞ্জানিয়ার ন্যাশনাল পার্ক অথরিটির অফিসে রেজিস্ট্রেশন পর্ব শেষে পর্বতে ওঠা শুরু করলাম। আমাদের প্রথম দিনের সামিট ৯ হাজার ৯০০ ফুট উচ্চতায় মাছামি ক্যাম্পে। ঘন রেইন ফরেস্ট পার হয়ে প্রায় চার হাজার ফুটের মতো পর্বতারোহণ করতে আমাদের প্রায় পাঁচ ঘণ্টার মতো লেগে গেল। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আমরা ক্যাম্পে পৌঁছালাম। পোর্টাররা আমাদের আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। তারা রান্নার পাশাপাশি আমাদের দুজনের জন্য আলাদা টেন্ট সেটআপ করে রেখেছে।
ক্লাইম্বার্স আমরা দুজন। আমাদের জন্য দুজন গাইডসহ সব মিলিয়ে ১৪ জন। বাকিরা পোর্টার। বিশাল বহর। আমি এর আগে আমেরিকা ও মেক্সিকোতে কিছু পাহাড়ে উঠেছি। সেখানে আমি নিজেই পর্বতারোহী, নিজেই পোর্টার। সবকিছু নিজেকেই বহন করতে হয়। সেদিক থেকে কিলিমানজারোতে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলাম। কিন্তু এর আগে ১৯ হাজার ফুটের ওপরে পর্বতারোহণ করিনি। তাই আমার মনে প্রতিনিয়ত একটা শঙ্কা কাজ করছিল!
প্রথম দিনের সামিট শেষে পোর্টাররা খাবার টেবিলে পরিবেশন করল স্যুপ, আলু সেদ্ধ, মাছ ভাজা, গরম পানি, চা-কফি ও ফল। সত্যি কথা বলতে এলাহিকাণ্ড, আমার আগের পাহাড়ে ওঠার অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করলে। পরিচয় হলো সদাহাস্য খাবার পরিবেশনকারী মাসাভির সঙ্গে। পরবর্তী দিনগুলোতে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। রাতে গাইডরা আমাদের শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ, হার্টবিট রেট ও পানিশূন্যতা পরীক্ষা করল। এখন থেকে প্রতিদিন তারা এটা দিনে দুবার করে পরীক্ষা করবে ।
এ ছাড়া তারা প্রতিদিন সকাল সাতটায় ওয়েকআপ কল দিয়ে গরম চা অথবা কফি দিত। চা বা কফি খেয়ে বরাদ্দ এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আমরা পর্বতারোহণের জন্য প্রস্তুত হতাম। আটটায় খাওয়ার পর নয়টার মধ্যে পর্বতারোহণ শুরু হতো। আমাদের দ্বিতীয় দিনের গন্তব্য ছিল ১২ হাজার ৫০০ ফুট ওপরে সিরা ক্যাম্পে। ওপরে ওঠার সময় রেইন ফরেস্ট শেষ হয়ে গেল এবং মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হানা দিল। ক্যাম্পে পৌঁছানোর ১০-১৫ মিনিট আগে আমরা প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টির কবলে পড়লাম। তাড়াতাড়ি ক্যাম্পে পৌঁছে আমরা নিজ নিজ টেন্টে ঢুকে পড়লাম। ঝড়-বৃষ্টি চলল ঘণ্টা দুইয়ের মতো।
বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর আমরা রাতের খাবার খেলাম। মেনু স্যুপ, পানকেক, ভাত (গাইড রবার্টকে বলেছিলাম ভাতের কথা), গরুর মাংস ও সবজি। কিছুটা বাংলাদেশি টেস্টের। সঙ্গে চা, কফি আর কিছু ফ্রুটস। খাওয়ার পর পরদিনের পর্বতারোহণ নিয়ে কথা হলো গাইড রবার্ট আর জুনিয়রের সঙ্গে। তৃতীয় দিনের পর্বতারোহণ কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। এ দিন দুটি সামিট। প্রথমটি লাভা টাওয়ার আর দ্বিতীয়টি আমাদের তৃতীয় দিনের ক্যাম্প বারানকো হাট।
সকাল নয়টায় পর্বতারোহণ শুরু হলো। লাভা টাওয়ার ১৫ হাজার ২০০ ফুট উচ্চতায়। সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগল পাঁচ ঘণ্টা। ওখান থেকে কিলিমানজারোর বরফগুলো দেখতে চমৎকার লাগে। লাভা টাওয়ারে লাঞ্চ করে আমরা ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিলাম। পাহাড়ে ওঠার সময় উচ্চতা যত বাড়তে থাকে অক্সিজেন ততো কম হয় এবং এজন্য শরীরকে ভালোভাবে আক্লিমাটাইজ করতে হয়। আক্লিমাটাইজেশনের নিয়ম হচ্ছে প্রতিদিন বেশি উচ্চতায় ক্লাইম্ব করা আর রাতে বিশ্রাম নেওয়া নিম্ন উচ্চতায়। এটা হলে শরীরে রেড অক্সিজেন ব্লাড সেল বেড়ে যায় আর শরীর অনেক উচ্চতায় বেশি পরিমাণে অক্সিজেন নিতে পারে।। লাভা টাওয়ার আক্লিমাটাইজেশন করার জন্য খুব ভালো জায়গা।
লাভা টাওয়ার থেকে আবার নিচে নামতে হয়। পথ খুব কঠিন। এ সময় একটু ভুলের জন্য অনেক বড় বিপদ হতে পারে। আমাদের পরবর্তী সামিট বারানকো হুট ১২ হাজার ৯০০ ফুট উচ্চতায়। যাওয়ার পথে দেখা হলো অসুস্থ অনেক পর্বতারোহীর সঙ্গে। কেউ মাথা ধরে বসে আছেন, কেউ বা বমি করছেন। একটু পর আমারও একই অবস্থা হলো। বারানকো হট থেকে ঘণ্টা খানেক দূরে মাথা ঝিমঝিম ভাব শুরু হলো। ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হলো হালকা কাঁপুনি। ডাইনিং টেবিলে খাবার দেখে বমি করার অবস্থা। কিছু খাওয়া গেল না বরং ভালো মতো বমি করলাম। একটা ওষুধ খেলাম গরম চায়ের সঙ্গে। তারপর সোজা চলে গেলাম ঘুমানোর জন্য। মনে হচ্ছিল, আজকেই আমার শেষ দিন পর্বতারোহণের। কাল অসুস্থতা বাড়বে আর এখানেই পর্বতারোহণ শেষ করে নিচে নামতে হবে। অবশ্য রবার্ট আশ্বাস দিল, সকালের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। নানা দুশ্চিন্তার মধ্যে কখন যে ঘুমিয়েছিলাম জানি না। রাত প্রায় তিনটায় ঘুম ভাঙল। তখন কিছুটা খিদে লেগেছিল। হাতের পাশে কিছু স্ন্যাকস আর পানি ছিল। তা খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
রবার্টের কথাই ঠিক ছিল। পরদিন সকালে কিছুটা দুর্বলতা সত্ত্বেও ভালো লাগছিল। এ দিন আমাদের গন্তব্য কারাঙ্গা ভ্যালি পার হয়ে কারাঙ্গা ক্যাম্প। এক বিশাল উঁচু পাথরের বারানকো দেয়াল খুব সাবধানে পার হতে হয়। এই দেয়াল পার হওয়ার সময় চোখে পড়ল বিভিন্ন দেশের মানুষের আর পোর্টারদের ট্রাফিক জ্যাম। কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে তিন মাইল পথ চলে কারাঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছালাম। পথে দেখা মিলল শেষ পানির উৎস এক সরু পাহাড়ি কারাঙ্গা নদী। পরবর্তী সব ক্যাম্পের জন্য পোর্টাররা এখান থেকে পানি নিয়ে যান। কারাঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছে রেজিস্ট্রেশন লাইনে অপেক্ষা করার সময় আইফোনটা দিয়ে সিগনাল চেক করলাম। দেখলাম সিগনাল আছে। সঙ্গে সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়াতে কল দিয়ে গভীর রাতে আমার স্ত্রী শচিকে জানালাম সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। স্কাইপের মাধ্যমে বাংলাদেশে মায়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁর দোয়া চাইলাম। অবশেষে ফেসবুক চেক ইন করে কিছু ছবি আপলোড করলাম। আমার বন্ধু মাউরিও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলল।
১৩ ফেব্রুয়ারি ছিল আমার পর্বতারোহণ সঙ্গী মাউরির জন্মদিন। নাশতা খাওয়ার সময় ওকে শুভেচ্ছা জানালাম। তারপর সকাল নয়টায় আবার যাত্রা শুরু। আজকের সামিট ১৫ হাজার ৬০০ ফুট উচ্চতায় বারাফু ক্যাম্পে। সর্বশেষ গন্তব্য উহুরু পিক যাওয়ারে যাওয়ার আগে এটাই আমাদের শেষ ক্যাম্প। উচ্চতা আর অল্প অক্সিজেনের জন্য বারাফু ক্যাম্পে রাত কাটানোটা খুব চ্যালেঞ্জিং। এখানে পথ কিছুটা সহজ হলেও উচ্চতার জন্য আমাদের গতি ছিল খুব কম। পলে পলে অর্থাৎ আস্তে আস্তে চলার মর্ম এ দিন বুঝতে পারলাম। রাতে কোনো কিছু করার জন্য আর শক্তি পাচ্ছিলাম না। এমনকি চায়ের কাপ নেওয়ার সময় মনে হচ্ছিল শরীরে কোনো শক্তি নেই।
১৪ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা অনুয়ায়ী আমরা ভোর পাঁচটায় উঠলাম। চা-নাশতা খেয়ে ছয়টা ১০ মিনিটে শেষ পর্বতারোহণের জন্য আমাদের যাত্রা শুরু হলো। আমাদের গন্তব্য স্টেলা পয়েন্ট এবং উহুরু পিক। কিলিমানজারো পর্বতের স্টেলা পয়েন্ট একটা ল্যান্ডমার্ক। খুব আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে থাকলাম। ১৭ হাজার ৫০০ ফুট ওঠার পর মনে হলো আর যেতে পারব না। শম্বুকগতিতে যাচ্ছিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর গাইড জুনিয়র আমাকে বলল, হেই দেখো, বাঁ দিকে স্টেলা পয়েন্ট! আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। শুধু চিন্তা করছিলাম আমার কত দিনের ইচ্ছা। অনেক সাধনা ও অনেকের দোয়ায় শেষ পর্যন্ত আমি লক্ষ্যস্থলের কাছাকাছি এসেছি! এখন আর অন্য কিছু ভাবলে চলবে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছালাম স্টেলা পয়েন্টে। সেখানে অপূর্ব দৃশ্য। শুধু বরফ আর বরফ চারদিকে। আমাদের সৌভাগ্য, সূর্যের আলো আছে। মেঘ না থাকায় সবকিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। যারা আমাদের আগে ভোরবেলায় সামিট করেছিল তাদের আর আমাদের মতো ভাগ্য হয়নি। মেঘের জন্য তারা আর কিছুর দেখা পায়নি।
স্টেলা পয়েন্টে আমরা কিছু ছবি তুললাম। জিনজার টি খেলাম। আমার গাইড পশ্চিমে একটা জায়গা দেখিয়ে বলল, ওটাই উহুরু পিক। আমাদের যাত্রা এখনো শেষ হয়নি। আবার শুরু হলো পর্বতারোহণ! তখন দুপুর প্রায় একটা। চারদিকে অসাধারণ দৃশ্য আর কিলিমানজারোর বিশাল হিমবাহ। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ২০৩০ সাল নাগাদ গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য এসব হিমবাহ গলে যাবে। অবশ্য বিশাল হিমবাহ দেখে আমার তা মনে হলো না। এটা সময়ই বলে দেবে। ঘণ্টা খানেক পর্বতারোহণ করে উহুরুতে পৌঁছালাম। তখন তানজানিয়া সময় ঠিক দুইটা।
এর আগে অন্যান্য পর্বতে ওঠার সময় বাংলাদেশি পতাকা নিয়ে যেতাম। ২০১৩ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব নেওয়ার পর এখন আমার ব্যাকপ্যাকে আরও একটা পতাকা যোগ হয়েছে। সেটা আমেরিকান পতাকা। এক অনাবিল শান্তি বয়ে গেল মনে, যখন বাংলাদেশি পতাকা নিয়ে কিলিমানগারো পর্বতশৃঙ্গের উহুরু পিকে দাঁড়ালাম। যে পর্বতারোহণ জ্যাকেট আর প্যান্ট পরে ছিলাম, সেগুলো অবশ্য বাংলাদেশের তৈরি! আমার আইফোন আর নাইকোন ক্যামেরাটা দিয়ে আমাদের দুই গাইড মুহুর্মুহু ছবি তুলতে লাগল। এই সময় স্মরণ হলো আমেরিকাতে থাকা স্ত্রী শচি, দুই সন্তান সাফওয়ান, সোফিয়া আর দেশে থাকা বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ দেশের মানুষের কথা। যখনই দেশের লাল-সবুজের পতাকা উঁচু করে ধরতে পারব, দেশের মান-মর্যাদা ততই আরও বাড়বে। এর পরে আমেরিকান পতাকা নিয়ে দাঁড়ালাম। এই দেশও আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমার টেকনিক্যাল ক্লাইম্বিং আমেরিকাতে আসার পর থেকেই শুরু।
কাজী শাহরিয়ার রহমান : ফ্রিমন্ট, ক্যালিফোরনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
বেঙ্গলি টাইমস/০২ এপ্রিল ২০১৪/০৮:৫৫পিএম/টরন্টো/কানাডা
কাজী শাহরিয়ার রহমান
প্রায় দুই বছর আগের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু গত ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪। সানজোসে, ক্যালিফোরনিয়া বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে প্রথমে হিউস্টন। সেখান থেকে টারকিশ এয়ারলাইনসে ইস্তাম্বুল হয়ে তাঞ্জানিয়ার কিলিমানজারো বিমানবন্দর। ভ্রমণটা ভালোই ছিল। ৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে তিনটায় বিমানবন্দরে প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গাইড কোম্পানির গাড়িচালক। চালক নিয়ে গেল মশির হোটেল পানামাতে।
সকালে দেখা হলো আমাদের গাইড কোম্পানি কিলিমানজারো ব্রাদার্স অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চারের পরিচালক জর্জ এমটাকির সঙ্গে। তিনি জানালেন, আমাদের প্রধান গাইড হবে রোবার্ট এমটাবা। আর পাহাড়ে ওঠার অভিযান শুরু হবে ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে। দুপুরে আমার পর্বতারোহণ সঙ্গী মাউরিসিও টামায়ো এল ফ্লোরিডার মিয়ামি থেকে।
এই তিন দিনে যতটুকু সম্ভব জেটল্যাগ কাটানো আর শহরে ঘুরে বেড়ানো। আমরা একদিন একটা জলপ্রপাত দেখলাম এবং কিলিমানজারো মারাংগু গেট ঘুরে এলাম। এর মধ্যে গাইডরা আমাদের কিছু স্থানীয় ভাষা শেখাল। যেমন ‘পলে পলে’। বাংলায় এর অর্থ আস্তে আস্তে চলো। পরবর্তী কয়েক দিন এই পলে পলে শব্দ আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেল।
ফেব্রুয়ারি মাস শুষ্ক মৌসুম হলেও মাউনটেন-ফোরকাস্ট কম-এর মাধ্যমে জানা গেল পরবর্তী সাত দিন কিলিমানজারোতে বৃষ্টি, বরফ সবকিছুই থাকবে। এতে আমরা কিছুটা দমে গেলও আশা হারালাম না। মনকে সতেজ রাখতে মাউরি ও আমি একে অপরকে উৎসাহিত করলাম।
নির্ধারিত দিন সকালে জর্জ তাঁর দলবল নিয়ে হোটেলে এল। খাবারদাবারসহ গাড়িভর্তি বিভিন্ন রকমের প্রয়োজনীয় জিনিস; ক্লাইম্বিং গিয়ারস, টেন্ট, ফোল্ড চেয়ার-টেবিল ইত্যাদি। আমাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও গাড়িতে তোলা হলো। মশি শহর থেকে কিলিমানজারো পর্বতে ওঠার সবচেয়ে ভালো পথ হলো মাছামে গেট হয়ে। প্রায় ছয় হাজার ফুট উচ্চতায় মাছামে গেট। চূড়ায় উঠতে ছয় রাত আর সাত দিন লাগবে। মশি থেকে ৪৫ মিনিটের পথ মাছামে গেট। গাড়িতে ওখানে পৌঁছে আমি, আমার পর্বতারোহণ সঙ্গী মাউরি আর গাইডরা মিলে ঠিক করলাম প্রতিদিন আমাদের একেকটা নতুন সামিট বা সর্বোচ্চ শৃঙ্গ থাকবে আর কিলিমাঞ্জারোর সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠার জন্য এখনই আমরা বেশি মনোযোগ দেব না।
তাঞ্জানিয়ার ন্যাশনাল পার্ক অথরিটির অফিসে রেজিস্ট্রেশন পর্ব শেষে পর্বতে ওঠা শুরু করলাম। আমাদের প্রথম দিনের সামিট ৯ হাজার ৯০০ ফুট উচ্চতায় মাছামি ক্যাম্পে। ঘন রেইন ফরেস্ট পার হয়ে প্রায় চার হাজার ফুটের মতো পর্বতারোহণ করতে আমাদের প্রায় পাঁচ ঘণ্টার মতো লেগে গেল। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আমরা ক্যাম্পে পৌঁছালাম। পোর্টাররা আমাদের আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। তারা রান্নার পাশাপাশি আমাদের দুজনের জন্য আলাদা টেন্ট সেটআপ করে রেখেছে।
ক্লাইম্বার্স আমরা দুজন। আমাদের জন্য দুজন গাইডসহ সব মিলিয়ে ১৪ জন। বাকিরা পোর্টার। বিশাল বহর। আমি এর আগে আমেরিকা ও মেক্সিকোতে কিছু পাহাড়ে উঠেছি। সেখানে আমি নিজেই পর্বতারোহী, নিজেই পোর্টার। সবকিছু নিজেকেই বহন করতে হয়। সেদিক থেকে কিলিমানজারোতে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলাম। কিন্তু এর আগে ১৯ হাজার ফুটের ওপরে পর্বতারোহণ করিনি। তাই আমার মনে প্রতিনিয়ত একটা শঙ্কা কাজ করছিল!
প্রথম দিনের সামিট শেষে পোর্টাররা খাবার টেবিলে পরিবেশন করল স্যুপ, আলু সেদ্ধ, মাছ ভাজা, গরম পানি, চা-কফি ও ফল। সত্যি কথা বলতে এলাহিকাণ্ড, আমার আগের পাহাড়ে ওঠার অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করলে। পরিচয় হলো সদাহাস্য খাবার পরিবেশনকারী মাসাভির সঙ্গে। পরবর্তী দিনগুলোতে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। রাতে গাইডরা আমাদের শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ, হার্টবিট রেট ও পানিশূন্যতা পরীক্ষা করল। এখন থেকে প্রতিদিন তারা এটা দিনে দুবার করে পরীক্ষা করবে ।
এ ছাড়া তারা প্রতিদিন সকাল সাতটায় ওয়েকআপ কল দিয়ে গরম চা অথবা কফি দিত। চা বা কফি খেয়ে বরাদ্দ এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আমরা পর্বতারোহণের জন্য প্রস্তুত হতাম। আটটায় খাওয়ার পর নয়টার মধ্যে পর্বতারোহণ শুরু হতো। আমাদের দ্বিতীয় দিনের গন্তব্য ছিল ১২ হাজার ৫০০ ফুট ওপরে সিরা ক্যাম্পে। ওপরে ওঠার সময় রেইন ফরেস্ট শেষ হয়ে গেল এবং মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হানা দিল। ক্যাম্পে পৌঁছানোর ১০-১৫ মিনিট আগে আমরা প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টির কবলে পড়লাম। তাড়াতাড়ি ক্যাম্পে পৌঁছে আমরা নিজ নিজ টেন্টে ঢুকে পড়লাম। ঝড়-বৃষ্টি চলল ঘণ্টা দুইয়ের মতো।
বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর আমরা রাতের খাবার খেলাম। মেনু স্যুপ, পানকেক, ভাত (গাইড রবার্টকে বলেছিলাম ভাতের কথা), গরুর মাংস ও সবজি। কিছুটা বাংলাদেশি টেস্টের। সঙ্গে চা, কফি আর কিছু ফ্রুটস। খাওয়ার পর পরদিনের পর্বতারোহণ নিয়ে কথা হলো গাইড রবার্ট আর জুনিয়রের সঙ্গে। তৃতীয় দিনের পর্বতারোহণ কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। এ দিন দুটি সামিট। প্রথমটি লাভা টাওয়ার আর দ্বিতীয়টি আমাদের তৃতীয় দিনের ক্যাম্প বারানকো হাট।
সকাল নয়টায় পর্বতারোহণ শুরু হলো। লাভা টাওয়ার ১৫ হাজার ২০০ ফুট উচ্চতায়। সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগল পাঁচ ঘণ্টা। ওখান থেকে কিলিমানজারোর বরফগুলো দেখতে চমৎকার লাগে। লাভা টাওয়ারে লাঞ্চ করে আমরা ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিলাম। পাহাড়ে ওঠার সময় উচ্চতা যত বাড়তে থাকে অক্সিজেন ততো কম হয় এবং এজন্য শরীরকে ভালোভাবে আক্লিমাটাইজ করতে হয়। আক্লিমাটাইজেশনের নিয়ম হচ্ছে প্রতিদিন বেশি উচ্চতায় ক্লাইম্ব করা আর রাতে বিশ্রাম নেওয়া নিম্ন উচ্চতায়। এটা হলে শরীরে রেড অক্সিজেন ব্লাড সেল বেড়ে যায় আর শরীর অনেক উচ্চতায় বেশি পরিমাণে অক্সিজেন নিতে পারে।। লাভা টাওয়ার আক্লিমাটাইজেশন করার জন্য খুব ভালো জায়গা।
লাভা টাওয়ার থেকে আবার নিচে নামতে হয়। পথ খুব কঠিন। এ সময় একটু ভুলের জন্য অনেক বড় বিপদ হতে পারে। আমাদের পরবর্তী সামিট বারানকো হুট ১২ হাজার ৯০০ ফুট উচ্চতায়। যাওয়ার পথে দেখা হলো অসুস্থ অনেক পর্বতারোহীর সঙ্গে। কেউ মাথা ধরে বসে আছেন, কেউ বা বমি করছেন। একটু পর আমারও একই অবস্থা হলো। বারানকো হট থেকে ঘণ্টা খানেক দূরে মাথা ঝিমঝিম ভাব শুরু হলো। ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হলো হালকা কাঁপুনি। ডাইনিং টেবিলে খাবার দেখে বমি করার অবস্থা। কিছু খাওয়া গেল না বরং ভালো মতো বমি করলাম। একটা ওষুধ খেলাম গরম চায়ের সঙ্গে। তারপর সোজা চলে গেলাম ঘুমানোর জন্য। মনে হচ্ছিল, আজকেই আমার শেষ দিন পর্বতারোহণের। কাল অসুস্থতা বাড়বে আর এখানেই পর্বতারোহণ শেষ করে নিচে নামতে হবে। অবশ্য রবার্ট আশ্বাস দিল, সকালের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। নানা দুশ্চিন্তার মধ্যে কখন যে ঘুমিয়েছিলাম জানি না। রাত প্রায় তিনটায় ঘুম ভাঙল। তখন কিছুটা খিদে লেগেছিল। হাতের পাশে কিছু স্ন্যাকস আর পানি ছিল। তা খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
রবার্টের কথাই ঠিক ছিল। পরদিন সকালে কিছুটা দুর্বলতা সত্ত্বেও ভালো লাগছিল। এ দিন আমাদের গন্তব্য কারাঙ্গা ভ্যালি পার হয়ে কারাঙ্গা ক্যাম্প। এক বিশাল উঁচু পাথরের বারানকো দেয়াল খুব সাবধানে পার হতে হয়। এই দেয়াল পার হওয়ার সময় চোখে পড়ল বিভিন্ন দেশের মানুষের আর পোর্টারদের ট্রাফিক জ্যাম। কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে তিন মাইল পথ চলে কারাঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছালাম। পথে দেখা মিলল শেষ পানির উৎস এক সরু পাহাড়ি কারাঙ্গা নদী। পরবর্তী সব ক্যাম্পের জন্য পোর্টাররা এখান থেকে পানি নিয়ে যান। কারাঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছে রেজিস্ট্রেশন লাইনে অপেক্ষা করার সময় আইফোনটা দিয়ে সিগনাল চেক করলাম। দেখলাম সিগনাল আছে। সঙ্গে সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়াতে কল দিয়ে গভীর রাতে আমার স্ত্রী শচিকে জানালাম সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। স্কাইপের মাধ্যমে বাংলাদেশে মায়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁর দোয়া চাইলাম। অবশেষে ফেসবুক চেক ইন করে কিছু ছবি আপলোড করলাম। আমার বন্ধু মাউরিও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলল।
১৩ ফেব্রুয়ারি ছিল আমার পর্বতারোহণ সঙ্গী মাউরির জন্মদিন। নাশতা খাওয়ার সময় ওকে শুভেচ্ছা জানালাম। তারপর সকাল নয়টায় আবার যাত্রা শুরু। আজকের সামিট ১৫ হাজার ৬০০ ফুট উচ্চতায় বারাফু ক্যাম্পে। সর্বশেষ গন্তব্য উহুরু পিক যাওয়ারে যাওয়ার আগে এটাই আমাদের শেষ ক্যাম্প। উচ্চতা আর অল্প অক্সিজেনের জন্য বারাফু ক্যাম্পে রাত কাটানোটা খুব চ্যালেঞ্জিং। এখানে পথ কিছুটা সহজ হলেও উচ্চতার জন্য আমাদের গতি ছিল খুব কম। পলে পলে অর্থাৎ আস্তে আস্তে চলার মর্ম এ দিন বুঝতে পারলাম। রাতে কোনো কিছু করার জন্য আর শক্তি পাচ্ছিলাম না। এমনকি চায়ের কাপ নেওয়ার সময় মনে হচ্ছিল শরীরে কোনো শক্তি নেই।
১৪ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা অনুয়ায়ী আমরা ভোর পাঁচটায় উঠলাম। চা-নাশতা খেয়ে ছয়টা ১০ মিনিটে শেষ পর্বতারোহণের জন্য আমাদের যাত্রা শুরু হলো। আমাদের গন্তব্য স্টেলা পয়েন্ট এবং উহুরু পিক। কিলিমানজারো পর্বতের স্টেলা পয়েন্ট একটা ল্যান্ডমার্ক। খুব আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে থাকলাম। ১৭ হাজার ৫০০ ফুট ওঠার পর মনে হলো আর যেতে পারব না। শম্বুকগতিতে যাচ্ছিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর গাইড জুনিয়র আমাকে বলল, হেই দেখো, বাঁ দিকে স্টেলা পয়েন্ট! আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। শুধু চিন্তা করছিলাম আমার কত দিনের ইচ্ছা। অনেক সাধনা ও অনেকের দোয়ায় শেষ পর্যন্ত আমি লক্ষ্যস্থলের কাছাকাছি এসেছি! এখন আর অন্য কিছু ভাবলে চলবে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছালাম স্টেলা পয়েন্টে। সেখানে অপূর্ব দৃশ্য। শুধু বরফ আর বরফ চারদিকে। আমাদের সৌভাগ্য, সূর্যের আলো আছে। মেঘ না থাকায় সবকিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। যারা আমাদের আগে ভোরবেলায় সামিট করেছিল তাদের আর আমাদের মতো ভাগ্য হয়নি। মেঘের জন্য তারা আর কিছুর দেখা পায়নি।
স্টেলা পয়েন্টে আমরা কিছু ছবি তুললাম। জিনজার টি খেলাম। আমার গাইড পশ্চিমে একটা জায়গা দেখিয়ে বলল, ওটাই উহুরু পিক। আমাদের যাত্রা এখনো শেষ হয়নি। আবার শুরু হলো পর্বতারোহণ! তখন দুপুর প্রায় একটা। চারদিকে অসাধারণ দৃশ্য আর কিলিমানজারোর বিশাল হিমবাহ। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ২০৩০ সাল নাগাদ গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য এসব হিমবাহ গলে যাবে। অবশ্য বিশাল হিমবাহ দেখে আমার তা মনে হলো না। এটা সময়ই বলে দেবে। ঘণ্টা খানেক পর্বতারোহণ করে উহুরুতে পৌঁছালাম। তখন তানজানিয়া সময় ঠিক দুইটা।
এর আগে অন্যান্য পর্বতে ওঠার সময় বাংলাদেশি পতাকা নিয়ে যেতাম। ২০১৩ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব নেওয়ার পর এখন আমার ব্যাকপ্যাকে আরও একটা পতাকা যোগ হয়েছে। সেটা আমেরিকান পতাকা। এক অনাবিল শান্তি বয়ে গেল মনে, যখন বাংলাদেশি পতাকা নিয়ে কিলিমানগারো পর্বতশৃঙ্গের উহুরু পিকে দাঁড়ালাম। যে পর্বতারোহণ জ্যাকেট আর প্যান্ট পরে ছিলাম, সেগুলো অবশ্য বাংলাদেশের তৈরি! আমার আইফোন আর নাইকোন ক্যামেরাটা দিয়ে আমাদের দুই গাইড মুহুর্মুহু ছবি তুলতে লাগল। এই সময় স্মরণ হলো আমেরিকাতে থাকা স্ত্রী শচি, দুই সন্তান সাফওয়ান, সোফিয়া আর দেশে থাকা বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ দেশের মানুষের কথা। যখনই দেশের লাল-সবুজের পতাকা উঁচু করে ধরতে পারব, দেশের মান-মর্যাদা ততই আরও বাড়বে। এর পরে আমেরিকান পতাকা নিয়ে দাঁড়ালাম। এই দেশও আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমার টেকনিক্যাল ক্লাইম্বিং আমেরিকাতে আসার পর থেকেই শুরু।
কাজী শাহরিয়ার রহমান : ফ্রিমন্ট, ক্যালিফোরনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
বেঙ্গলি টাইমস/০২ এপ্রিল ২০১৪/০৮:৫৫পিএম/টরন্টো/কানাডা
Thursday, January 30, 2014
Bangladeshi Kachchi Biryani Recipe
Ingredients:
This Kachchi Biryani recipe will serve 20~25 adult.
- Goat meat
- Kalizira rice
- Butter/Ghee
- Potato
- Fried onion (Beresta)
- Ginger paste
- Garlic paste
- Cardamom
- Cinnamon
- Clove
- Nutmeg
- Mace
- Shah Zeera
- Kababchini
- Red chili powder
- Cumin powder
- Yogurt
- Rose water
- Kewda water
- Rose essence
- Kewda essence
- Orange food color
- Black pepper
- Saffron
- Salt
- Pistachio
- Raisin
- Almond
- Mawa
- Sugar
- Milk
- Alu Bakhara (Dried Plum)
- Flour dough
Goat meat piece should be 2″X3″ size |
10 lb of goat meat |
Garam Masala (clove, cardamom,cinnamon) to use as whole |
Put the whole garam masala |
Will use Kewda and Rose essence |
Yogurt |
Put 3 cup (standard rice cooker cup) of yogurt in the meat |
Garam Masala (clove, cardamom,cinnamon) to grind using coffee grinder or Magic Bullet |
Grind the garam masala (above 2 pictures) and put on top of the meat |
Fresh ginger paste and garlic paste |
Ginger paste 4 table spoon, Garlic paste 2 table spoon |
Grind mace and nutmeg (I am using ground Nutmeg from Smart n Final) |
Mace: One third of tea spoon |
Nutmeg: 2 tea spoon |
Use ground Shah Jeera. Use also quarter teaspoon of ground kababchini which can be found sometimes in the grocery store. |
Shah Jeera: 1 quarter of tea spoon. Ground Kababchini: 1 quarter of tea spoon. |
Ground Chili: 2 table spoon. Ground Cumin: 2 and half table spoon. |
Rose essence: 5 drops. Kewda Essence: 5 drops. |
3 table spoon of Kewda water and 3 table spoon of rose water. |
Put 1 to 2 table spoon of salt. |
Mix all these ingredients properly. After mixing you taste the mixture so that you have enough salt. You can mix 1~2 tea spoon of sugar too for taste. |
For marination it needs 4 hours. You can also marinate overnight in the refrigerator. |
Things needed to make the potatoes of Kachchi. Garlic paste, red chili, Black pepper, salt, orange food color, some saffron. |
Butter (ghee) needed 12 oz~ 16 oz. In the picture only 8 oz showing. You can use Mohan ghee available in the Indian grocery store. |
Put 12~16 oz of ghee in the pan, melt them in slow heat. |
Put one cup of water and the marinated potato mixture. |
Cook the potato in low heat for 30~40 minutes. The potato outer crust should be little softer. Potato should be ready to put on top of meat layer. |
Marinated meat |
Put 2 cup (rice cooker cup) of milk and 20 pieces of Alu Bakhara (Dried Plum) |
Add 4 cups of beresta (fried onion). I use the beresta available in the store. You can make your own beresta (fired onion). |
Mix properly |
Put potatoes on top of meat layer |
Once all potatoes are put on top of meat layer, mix 2 cup of milk with the butter mixture |
Pour almost 80% of butter and milk mixture, save remaining 20% liquid mixture |
After pouring milk/butter mixture it should look like this |
Pistachio, Almond, Raisin, Mawa (you can make yourself or can buy from Indian grocery store) |
Grind the pistachio |
16-18 cups of Kalizira/Chinigura chal (rice) |
Flour dough to seal the pan cover |
The above items will be needed to cook the kalizira rice |
Put some cardamom and cinnamon sticks in the boiling water |
Put salt as your taste |
Make your strainer ready to separate the boiling water and rice |
Mix some food color with water, make it ready for later use |
Once the water starts to boil put all the rice |
Drain out most of the the water, while draining out the water you can save around 2~3 cups of water in a separate pan for later use. |
2~3 cups of saved boiling water |
After saving 2~3 cups of water, accumulate all the rice in the strainer |
Put first layer of rice on top of potato layer |
Put one layer of rice to cover up the potato. |
After the first layer of rice, your pan should look like this |
Mix Mawa, Almond, Pistachio, Raisin on top of the first layer of rice. |
Add second layer of rice |
Add drops of orange food color to make the rice colorful |
Mix the remaining 20% ghee mixture and boiling water mixture together and pour them all the sides of the pan and on top of second layer of rice |
Time to seal the pan with the lid |
Take out the hard crust flour. |
First look of cooked Kachchi! |
Start serving from the bottom, from meat->potato->rice |
Kachchi ready to eat. Enjoy! |
Credit:
Late Siddika Kabir's Recipe, Al-Noor bhai (head chef of Falcon Hall), different recipes in internet, passion of making the kachchi for years and family/friends who tasted the Kachchi biryani!
Labels:
Bangladeshi Kachchi,
Bangladeshi kachchi Biryani,
biryani,
kacchi,
Kachchi,
kachi,
Quazi Shahriar Rahman,
Shahriar,
Shahriar75,
Sujan
Location:
Fremont, CA, USA
Subscribe to:
Posts (Atom)